Saturday, 28 October 2017

আমার পঞ্চাশ বছর। ( ১ম অংশ)

আমার ছোট বেলার অনেক কথা মায়ের কাছে শোনা। মায়ের কাছে শুনেছি আমি সিঙ্গুর হাসপাতালে বাংলার ১৩৭০ বা ১৩৭১ সালের মাঘ মাসের শেষ বুধবার সকালে না রাতে বলে ছিল মনে নেই তবে আমি ১০ টা ৩০ মিনিটে জণ্ম গ্রহণ করে ছিলাম। আমাদের বাড়ি টা ছিল সিঙ্গুর থানার অন্তর্গত পল্তাগড় গ্রামে মাটির বাড়ি পেটোখোলার ছাউনি, টিনের দরজা। আমরা চার ভাই বোন আমার দিদি বড়ো তার পর আমি আমার পরে দু ভাই। আমার বাবা সুশীল কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল সাব ডিভিশনের অর্ন্তগত গৌরনদী উপজিলার নলচিরার বাসিন্দা ছিলেন। তখন নলচিরা ছিল বাখরগঞ্জের গৌরনদী থানার অন্তর্গত ।এখন কী নাম হয়েছে জানা নেই। আমার পিতা ভারত স্বাধীন হবার আগেই এপার বাংলায় এসেছিলেন এবং সিঙ্গুর থানার অন্তর্গত পল্তাগড় গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ।তিনি বিরামনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। আমার পিতামহের নাম ছিল উপেন্দ্র নাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। আমার পিতামহীর নাম ছিল ননীবালা দেবী। আমার বাবার কাছে যে দলিল পরচা ছিল সেগুলি তে আরও কতগুলি নাম আছে তারা কারা আমার জানা নেই। যেমন ১)ধীরেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় ২)নরেন্দ্র নাথ বন্দ্যোপাধ্যায়েরধ্যায় ৩)বামা সুন্দরী দেবী
৪)গোপাল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ৫)মুকুন্দ চক্রবর্তী
৬)দুর্গাপদ ভট্টাচার্য ৭)ক্ষীরোদসুন্দরী দেবী এদের কার সাথে কী সম্পর্ক আমার জানা নেই। তবে এদের কারো কারো নামের নীচে থানা - গৌরনদী নলচিরা সাং - কান্ড পাশা লেখা আছে। বাবার কাছে শুনেছি বাবার মামা ধীরেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় ফৌজদারি কোর্টের উকিল ছিলেন। এতো কথা লিখছি কেন? যদি কেউ আমার ব্লগের লেখা পড়েন আমার পিতার সম্পর্কের কেউ এদেশে বাংলাদেশ থাকেন তবে command box এ মন্তব্য লিখবেন। কেন আমি আগেও চেষ্টা করেছি পিতার সম্পর্কের কেউ আছে কিনা। আমি শুধু জানতে চাই বাবা কেন দেশ স্বাধীন হবার আগেই এপার বাংলায় এসেছিলেন, এবং প্রায় কপর্দক শুন্য অবস্হায়। এখানে বলি যে আমি সম্পত্তির অধিকার পাব বলে খোঁজ করছি, তা কিন্তু নয়। এটি নিছক কৌতুহল।
আমার কথা না বলে কেমন বাবার কথা বলে ফেললাম, তবে হ্যাঁ বাবা মা ছাড়া কেউ পৃথিবীতে আসতে পারে না। তাই বাবার কথা হল দরকার হলে আবার লিখব। এবার মায়ের কথা একটু লিখতে হবে, কারণ আমার মায়ের কথা না বললেই নয় কারণ আমার মা না হলে আমি আজ এই জায়গায় আসতে পারতাম না। আমার জন্য মা নিজের জীবন দিয়ে দিয়েছেন। আমার এক কূলাঙ্গার ভাই এর হাতে। মা আমাদের অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছেন, মাকে আমরা পেয়ে ছিলাম অন্য ভাবে। তিনি জীবনের প্রতিদিন যুদ্ধ করে গেছেন। সুখ ভোগ করতে হয় নি। মায়ের সেই কষ্টের দিন গুলো আমি ভুলতে পারি না। কী অমানুষিক দুঃখ দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতে হতো। বাবা নামেই চাকরি করতেন, আমরা অর্ধেক দিন খেতে পাইনি।কারণ তখন শিক্ষক দের বেতন কম ছিল আর অনিয়মিত ছিল, আর একটি কারণ আমার বাবার অপরিনাম দর্শিতা, আর একটি কারণ হল দোকান দারের চালাকি। কত বেতন জেনে নিয়ে ঠিক ঐ টাকা পর্যন্ত মাল দিত আবার বাড়তি দাম নেওয়া, ও জিনিস না এলেও ধারের খাতায় তা লিখে দেওয়া, এভাবে পনেরো দিনের মধ্যে বেতনের সবটাকা খরচ দেখিয়ে নিয়ে নেওয়া। আমরা বড়ো হয়ে বাবা কে দোকানে যেতে দিতাম না। আমরা যেতাম আর প্রতি দিন যা লাগতো নিয়ে আসতাম। সেই সময় ওই বেতনে সারা মাস খরচ করেও কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হতে লাগলো।
আমাদের কষ্ট একটু লাঘব হল, তবুও মাকে কারখানায় কাজ করতে যেতে হতো। 1980 সালের পর থেকে অবস্থা উন্নতি হলেও। তার আগের অবস্থা অবর্ননীয়, পরের বাড়ি থেকে খাবার চেয়ে আনা ফ্যান চেয়ে খাওয়া। কোনো দূরবর্তী স্থানে কোনো সার্বজনীন অনুষ্ঠানে খাওয়ানো হলে, ঠাকুমার হাত ধরে খেতে যাওয়া, সে ট্রেন পথে হলেও চলে যেতাম। জামা কাপড় চেয়ে এনে দিতেন মা। মাঝে মাঝে কিনেও দিতেন, শীতের পোশাক কেনা ছিল অকল্পনীয়। পুরনো বিছানার ছেঁড়া চাদর সেলাই করে কেটে সমান করে গায়ে দিয়েছি। অর্ধেক দিন খাবার জুটত না, তার উপর লেখা পড়ার জন্যে অপরের বই চেয়ে আনা খাতা পেন পেনসিল চেয়ে আনা পেনসিল দিয়ে লিখে মুছে আবার লেখা।
তার উপর ছিল পাড়ার লোকের অত্যাচার তাদের কারো যদি সূঁচও যদি হারিয়ে যেতো সেটা চুরি করেছি আমরা আমাদের ভাঙা ঘরে চলত তল্লাশি আর ভাঙচুর তো ছিল। এসব নিয়ে আরও কিছু কথা লেখা আছে, এর আগে আমার কথা, ও অসত্বিতের সংকট এ দু টো লেখা তে। হয় তো কেউ পড়ে নি। জানি না ভবিষ্যতে কেউ পড়বেন কি না? তবু আমি লিখি আমি ছোট থেকে অনেক নাটক কবিতা লিখে ছিলাম যা এখন অতীত। কারণ সে সব লেখা খাতা এখন আর খুঁজে পাই না। আমার একটা প্রশ্ন মনে দীর্ঘদিন ধরে ঘোরে বাঙাল কী আলাদা কোনো জাত যেমন হিন্দু, মুসলিম, শিখ না হলে এপার বাংলায় শিক্ষিত মানুষ ও বাঙাল জাত বলে সম্বোধন করে কেন? আমি স্কুলে পড়ার সময় আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং অন্য অনেক শিক্ষক বলতেন বাঙাল জাত। আমি পলতাগড় রাধারানী প্রাথমিক এবং পলতাগড় উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। এখনও অনেক ভালো শিক্ষিত মানুষ কে বাঙাল জাত বলতে শুনেছি। সেই জন্যই আমার মনে প্রশ্ন জাগে ওপার বাংলার মানুষ তথা ওপার বাংলা থেকে বিতাড়িত ভিটে মাটি ছেড়ে আসা মানুষ এপার বাংলায় বাঙাল জাত।
আমার ছোট থেকেই থেকেই আরেক টি প্রশ্ন জাগে, আমার মনে হয় এই প্রশ্ন টি শুধু আমার নয় যেসব মানুষ ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় এসেছিলেন, আমার বাবার মতো নিস্ব রিক্ত হয়ে, নিজের প্রাণ টুকু হাতে করে, তাদেরও এই প্রশ্ন। এই তথাকথিত বাঙাল জাত তৈরী করল কারা? দেশ স্বাধীন হল, দেশ তিন টুকরো হলো, বাংলা ও পাঞ্জাব ভাগ হলো। হাজার হাজার মানুষের ঘর বাড়ি জ্বলল। কত মানুষের প্রাণ গেল, আমি মনে করি এর জন্যে দায়ী গান্ধী এবং নেহরু এবং জিন্নাহ। ক্ষমতার লোভে তারা দেশ ভাগ করেছেন। এরা সুভাষচন্দ্র বোস থেকে শুরু অন্য বাঙালি নেতা দের সহ্য করতে পারতেন না। আর এই তীব্র জাতি বিদ্বেষ থেকে বাংলা ভাগ এবং সুভাষচন্দ্র বোস কে দেশে ঢুকতে না দেওয়া। এতেই ক্ষান্ত হননি ওপার বাংলা থেকে আসা মানুষ গুলো কে আশ্রয় দিয়েছেন। আন্দামান এবং দন্ডকারণ্যে কিন্তু বেঁচে থাকার সুব্যবস্থা করেন নি। আমার ভীষণ ঘৃনা হয় তথা কথিত এই সব বড়ো বড়ো দেশপ্রেমিক নেতাদের যারা দেশে প্রেমের নামে ক্ষমতার লোভে একটা জাতির ঐক্য ভেঙে দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করে। এদের এই কুচক্রী সিদ্ধান্তের ফলে পরিবার গুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, সামাজিক সম্পর্ক গুলো কাকা দাদা পিসি মাসি হারিয়ে তারা দেশ ছেড়ে চলে এসেছে। আবার অনেকর প্রিয়জন দের মরতে দেখেছেন। আর তখন ঐ সব নামি স্বাধীনতা সংগ্রামী ইংরেজ দের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সাজানো জেলে গিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী সেজে। দেশটাকে ভাগ করে নিয়ে ক্ষমতা ভোগ করতে আরম্ভ করে দিয়ে ছিলেন। তারাই আসলে এই নতুন জাতি অর্থাৎ "বাঙাল জাতি" তৈরী করে দিয়েছে। আর এদের জন্য এখন অনেক রকম অত্যাচার সহ্য করতে হয়। এমনকি তাদের এপার বাংলায় মেয়ে দের বিবাহ করার অধিকার টুকু নেই। যদিও হয়ে থাকে তবে সেটা অজান্তেই। জেনে সত্যিই বলে যদি বিবাহ হয়। তাহলে অনেক তথ্য গোপন রেখে না হলে কী করে ছেলেটি কে ঠকানো যায় তার ব্যবস্থা পাকা করে রাখে। কেন এতো কথা কারণ আমার বাবাকে বিয়ে করতে হয়েছিল। নদিয়া জেলার ক্ষীতীশ চক্রবর্তীর মেয়ে যোগমায়া কে, যারা বাংলাদেশের পাবনা জেলা থেকে এপার বাংলায় এসেছিল। এ তো গেল একটা দিক, আরেকটা দিকও আছে, যেমন ওপার বাংলার থেকে আসা মানুষ ব্রাহ্মণ হতে পারে না। আবার সে যদি আমার বাবার মতো সব হারিয়ে এপার বাংলায় আসে তবে, তিনি ব্রাহ্মণ হলেও ব্রাহ্মণ নন। শুনতে হয় ওপার থেকে এসে গলায় পৈতে ঝুলিয়ে ব্রাহ্মণ হয়েছে। আর মুখের ভাষা হলো শালা বাঙাল বামুন। আমি জানি না এসব কোনো কথা যারা শহরে বাস করেছেন। ওপার থেকে টাকা পয়সা সঙ্গে এনেছেন, তাদের শুনতে হয়েছে কিনা? আমার জানা নেই, কিন্তু  ছিন্নমূল, সর্বস্ব হারানো, আত্মীয় স্বজন হারানো, মানুষ গুলো কে প্রতি নিয়ত এপার বাংলার শিক্ষিত অশিক্ষিত মানুষের কাছে অপমানিত হতে হয়েছে। জীবন যন্ত্রণা সহ্য করে বেঁচে থেকে এসেছে। শুধু ঐ তিন নেতার ক্ষমতা বা গোদির লোভে বা প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী হবার লোভে। লোভের স্বীকার হতে হয়েছে বাঙালি হিন্দু দের আর পাঞ্জাবের অধিবাসী শিখ দের। এখনো এরা অত্যাচারিত। আমাদের পলতাগড় গ্রামের ভিটেরে সামান্য জমি দখল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে সেই বাবার আমল থেকে। যা আমি আগেই লিখেছি, বাবার আমলে আমি দেখেছি দড়ি দিয়ে জমি মেপে অশান্তি করতে। আমাদের বাড়িতে অনেক রকম ফলের গাছ ছিল। সেসব গাছে ফল হলে এসব হতো। ফল গুলো পেড়ে নিয়ে যেত নষ্ট করে দিত। আর মুখের ভাষা ছিল বাঙাল তাড়াতে হবে। আমিন এনে মাপা হতো তখন ঠিক হতো। একটা কথা বারবার বলতে শুনেছি ওজমি আমাদের নয় দান করা, বাবার কাছে শুনেছি দলিল করার খরচ কমানোর জন্য দানপত্র করা হয়েছিল। সকলেই হয়তো ভাবছেন তোমারা খুব ভালো কিছু বলতে না, শুধু শুধু পেছনে লাগতো। আমারা কি করতাম আগে বলে ছি। ওদেরি কারও কারও চাকর গিরি করতাম একমুঠো মুড়ি খাবার আশায়। যদি একটু ভুল হতো আর আমাদের বাড়িতে পোষা কোনো পশু জমিতে বা বাড়ির আশ পাশে যেতো তাহলে তো কথাই নেই শুরু হয়ে যেতো, ওদের বাঙাল তাড়ানো অভিযান।

Wednesday, 25 October 2017

করুণাময়ী মা তুমি তোমার অপার মহিমা।

তুমি কী অপার করুণায় আমাদের পালন করছ মা জননী। সবার রেশন কার্ড না থাক তাতে কী।
তুমি দিচ্ছ বালি আটা খেতে পারুক আর না পারুক তাতে তোমার কী? তোমার কী করুণা মা গো যার বাবা চার বা দু চাকা ছাড়া চলে না। তাকেও তুমি সাইকেল চাপিয়ে ছাড়ছ, শুধু পঞ্চম থেকে অষ্টম বাদে। তুমি কী ভালো মা গো, তুমি করেছ রাস্তা দিয়েছ সাইকেল বোনেরা সাইকেল চেপে যাচ্ছে ভাই গুলো একটু আদর করে জঙ্গলে নিয়ে যাচ্ছে, ওতে দোষের কি? তুমি দিচ্ছ মা জুতো, জামা, বই, খাতা শুধু পাঁচ বছরের বাচ্চা টিকে বাদ দিয়ে। তোমার অপার মহিমা মা গো "মিউ মিউ আর ঘেউ ঘেউ" দের উপর দিয়েছ পে কমিশন করে তুমি দিলে ডিএ নামক মূলো ঝুলিয়ে ছ মাস আগে ঘোষণা করে। কারণ দেনা করে গেছেন বামেরা বলে। তুমি তো দেনা করো না মা তুমি ছবি বিক্রি করে টাকা তোল মা। তোমার অসীম করুণা মা গো চাষের সারের দাম তিন গুণ হল, ফসল বিকোয় জলের দরে।দেনার দায়ে কৃষক মরে না খেয়ে মানুষ মরে আর তোর ছেলে রা মা রেশন কার্ড নিয়ে ঘোরে যার পাবার কথা সে পায় না মা সে যে খাবার জন্য হাহাকার করে। যদিও কষ্ট করে হাতে পায়ে ধরে কার্ড পেল তার আবার রঙের বাহারে রঙ বাহারি পনেরো দিনের এক জনের পাঁচ শ চাল। কেউ পায় তেরো টাকা কেজি কেউ পায় দু টাকা কেজি, আর পায় মা বালি না ধূলো আটা যার সাদা রং টা গায়েব। কাজ নেই মা ঘরে ঘরে বেকার ছেলে কাজ না পেয়ে আত্মহত্যা করে। আর আছে মা পেটের জ্বালায় ভিক্ষে করে, এখন আবার কয়েন নিয়ে ঝামেলা তাও প্রায় বন্ধ মা গো পেটের জ্বালা বড় জ্বালা মা গো, সবাই পায় না চপ কারখানায় কাজ আর মুড়ি কারখানা কত হবে। মুড়ি চপ কিনবে তার জন্য পয়সা লাগে কে দেবে?
তবু মা তোর পূজো করে, তুই তো মা শ্মশান কালী
তোর পূজা করে। মদের দোকান, দেশি মদের কারবার সে তো তোমার দান ঐ খেতে ঘরের মা বোন যায় অপরের কাছে। তবে তোর পূজো তে মদ লাগে বোম লাগে। আবার পূজো আসছে পঞ্চায়েত পূজো কত বলি নিবি মা। তোর অনেক কসাই আছে যাদের আবার অক্সিজেন কম ঢোকে। দেখ মা কসাই রা যাদের দিয়ে বলি করাচ্ছে, তারাই জেল খেটে মরে। আর বলি হয় সাধারণ মানুষ, কসাই দের দু শো আশি টাকা, হয় দু শো আশি কোটি।