Wednesday, 29 August 2018

সোনার গদা (শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়) ১ম অংশ

ভূমিকা :- আমি ঠিক গল্প লিখতে পারি না। তবু ও চেষ্টা করছি, এখন যে টি লিখব সেটি, একটি কাল্পনিক গোয়েন্দা গল্প।আমার গল্পের সখের গোয়েন্দা সত্যেন বোস বয়স ৩০ আর তার সহযোগী রজত ঘোষাল সেও সত্যেনের সম বয়সী। এই গল্প টি সম্পূর্ন আমার কল্পনা প্রসূত। কারো কোনো লেখা বা গল্প অনুকরণ বা অনুবাদ করে লেখা নয়। যদি হয় তবে সেটি অনিচ্ছাকৃত। নাম টা শুনে মনে হতে পারে এ বুঝি। ভীম বা হনুমানের সেই গদা যা সোনা দিয়ে তৈরি। আবার অনেকে ভাবতে পারেন
নারায়ণ বা গনেশের বা কুবেরের গদা নয়। একশো গ্রাম খাঁট সোনায় তৈরী করা এবং মাথায় একটি হীরে বসানো ভবতোষ বাবু দের পূর্ব পুরুষ দের গদা। এই গদা  যা ঘটে ছিল তাই নিয়ে এই গল্প।
প্রথম ভাগ কুসুম ডিহার বিখ্যাত মজুমদার বাড়ি ঘটনাটি এখন লিখছি ঘটে ছিল ২৫ /৩০ আগে তখন,
ভবতোষ মজুমদারের বয়স আনুমানিক ৫০-৫৫ বছর। পুর্ব পুরুষ জমিদারি ছিলো। বর্তমানে জমিদারি নেই কিন্তু আভিজাত্য বজায় আছে। লোকে সমীহ করে চলে। মুখের উপর কিছু বলে না, কিন্তু সেদিন দিনটা ছিল মাঘ মাসের মাঝামাঝি ভোরের বেলা বেশ ঠান্ডা। ঘন কুয়াশা ঢাকা। আশে পাশে কিছু দেখা যায় না। ভবতোষ বাবু মোটা শীতের পোশাক পরে বাইরে বেড়িয়ে ছেন। মর্নিং ওয়াক করার জন্য, প্রতি দিন তিনি যান এ দিনও হাঁটতে হাঁটতে একটু এগিয়েছেন, এমন সময় একজন চাদর গায়ে মাংকি টুপি পরে পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।। আর বলছেন "গদা টা ঠিক ঠাক আছে।" বলেই হন হন করে হেঁটে চলে গেল। গলার স্বর শুনে ভবতোষ বাবু বুঝতে পারলেন না, আসলে কে। এভাবে আরও কিছুটা এগিয়ে গিয়েছন, আর একজন একই কথা বলে চলে গেলেন। ভবতোষ বাবু দ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরে এলেন। আর ভাবতে লাগলেন, প্রায় এক শ দেড় শ বছর আগের একটা জিনিসের কথা ওরা জানল কি ভাবে। তিনি সাত পাঁচ ভাবছেন। এমন সময় ছোট্ট বৌমা এসে, চা বিস্কুট দিয়ে গেল। এখানে জানিয়ে রাখি ভবতোষ বাবুর তিন ছেলে মহিতোষ, পরিতোষ, আর মনোতোষ ।বড় ছেলে হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। মেজ বাইরে থাকে একটি বেসরকারি কোম্পানির ম্যানেজারের চাকরি করে। আর ছোট ছেলে, লেখা পড়া করেও চাকরি না করে যে টুকু জমি জায়গা আছে তাতে চাষ বাস করে। বড় ছেলের পসার ভালো সারা দিন অনেক রুগি আসে। অনেক রুগিকে বিনাপয়সায় ঔষুধ দ্যান। সেই জন্যও অনেকে আসে। তবে ইনকাম ভালোই হয়। মেজ ছেলে মাসে দু এক বার আসে, বাবা মা কে দেখতে। ও হ্যাঁ ভবতোষ বাবুর স্ত্রী গিরি বালা আছেন। আর দু নাতি ও এক নাতনি আছে। তিনি চা খাচ্ছেন আর ভাবছেন, লোক দু টি কী করে জানল? এমন সময় গিরি বালা দেবী এলেন, "ভজু কে কিছু পয়সা দাও একটু ভালো মাছ আনুক আর একটু আনাজ।" কেন ছোট খোকা আনাজ তোলেনি? - হ্যাঁ তুলেছে ঐ তো খালি বেগুন, ঐ দিয়ে কি জামাই কে ভাত দেওয়া যায়। "জামাই মানে,।" - সেকি আজ বড় মেয়ে আসবে। "-আমি তো একেবারে ভুলে গেছি।" - ছোট খোকা কে বল জেলে ডেকে সদর পুকুরে মাছ ধরতে। আমি ভজুকে পাঠাচ্ছি।" এই ভজু ওরফে ভজন বাড়িতে থাকে ফাই ফরমাস খাটে। আর বড় মেয়ে মানে ভবতোষ বাবুর বড় দাদা আশুতোষ বাবুর বড় মেয়ে। আশুতোষ বাবু বছর দুয়েক আগে মারা গেছেন, কিন্তু এক ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ভালো বাড়িতে জামাই ভালো সরকারি চাকরি করেন। ছেলে এই পুরানো বাড়িতে আছে। বাড়িটি কম বড়ো না পুরনো জমিদার বাড়ি। সব ভাই মিলে কিছু কিছু অংশ নতুন ভাবে সরিয়ে নিয়েছে। কিছু দিন আগে ঠাকুর ঘর সারানো হয়েছে। এখন প্রায় সকাল সাড়ে সাতটা বাজে। কথা গুলো আরও কয়েক দিন একই ভাবে বলেছে, তিনি গুরুত্ব দেননি, কিন্তু ভবতোষ বাবু আজ সকালের কথা গুলো ভুলতে পারছেন না। কি করে তারা জানল? এমন সময় কেশব এল, কেশব দাশগুপ্ত ভবতোষ বাবুর ছোট বেলার বন্ধু। আসলে কেশব দাদা মশায় ছিলেন এই জমিদার বাড়ির নায়েব। সেই থেকে এই দুজনের বন্ধুত্ব, ভবতোষ বাবু ভাবছেন, কেশব গদার কথা জানে না তো।
ভবতোষ - কেশব আমাদের ছোট বেলার কথা তোর মনে আছে। - কী কথা? - আমারা কি কি করতাম? - না বিশেষ কিছু মনে নেই তবে পূজোর সময় হলে যা যা হতো তার কিছু কিছু মনে আছে। এখানে কুমর এসে ঠাকুর তৈরী করত আমারা খেলতাম আর মাঝে মাঝে মন দিয়ে দেখতাম। এখানো অবশ্য কুমর এসে ঠাকুর তৈরি করে কিন্তু বাচ্ছা দের সেই টান আর নেই।
- ঠাকুরের সাজ গোজ সম্পর্কে কিছু মনে নেই।
সেরকম মনে নেই, তবে অনেক রকমের গয়না ছিল। এখন আর সেব নেই তাই না। সোনার তৈরি অনেক ধরনের জিনিস দেখছি।
কী কী দু একটার নাম বল দেখি। - সাত নরি হার, টিকলি দুল এরকম আরো অনেক কিছুর সাথে একটা গদার মত কিছু ছিল যার উপর আলো পড়লে আলো ঠিকরে পড়ত।
ভবতোষ অবাক শুনছিল ওর মুখে গদার মত কিছু একটা কথা শুনে চমকে উঠলেন।
কেশব বাবু সব দেখে শুনে বললেন "কী হলো বলতো তোর হঠাৎ এসব জিজ্ঞাসা করছিস!"
" না সে রকম কিছু না, সকালে না থাক ওসব বলা ভালো নয়।" কী বলা ভালো নয়। কী বলা ভালো নয়, দেখ ভাই সব কথা খুলে বল, মন হাল্কা হবে। তুই আমার ছোট বেলার বন্ধু, আমায় ভালো মত চিনিস। আমার পেট থেকে কথা বেরোবে না। " - সে আমি ভাল মত জানি। - তাহলে আমায় বলতে আপত্তি কোথায়? এমন সময় ভজহরি ওরফে ভজু দৌড়ে দৌড়ে এল, বাবু বাবু সদরে সদরে - বল না সদরে কী হয়েছে? বলছি বলছি সদর পুকুরে। - বড় মাছ পড়েছে। - ওটাই তো কেউ বুঝতে পারছি না। জেলে জাল টেনে তুলতে পারছে না। - - কেন রে? ওটাই তো বলতে ছি। - আবার ঐ তোর ভাষা বলিছিস। - না কর্তা বাবু আর বলবনি। - গাদা আবার। কেবশ বাবু থাকতে না পেরে বললেন, ওহে ভজহরি ঠিক করে বলো দেখি কী হয়েছে? ভজহরি - ছোড় দাববু জেলে ডেকে এনে জাল ফেলে ছিল। পেরথম বার জেলে জাল ফেলেল সদরের পূব পারে মাটের দিকে। কিন্তু জাল আর টেনে তুলতে পারছে না। - কেন পারছে না? - ওটাই তো বুঝতে পারছে না। ছোড়দা বাবু, আপনাকে ডাকছে?
ইতিমধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়েছে, জমিদার দের পুকুরে জালে কী পড়েছে টেনে তুলতে পারছে না। পুকুর পাড় লোকেলোকারন্য, ভবতোষ বাবু পৌঁছলেন ।গিয়ে দেখলেন ইতিমধ্যে কে বা কারা পুলিশ কে খবর দিয়েছে তারাও এসে হাজির। জেলে তো ভেবে অস্থির কী করবে? সে জলে নেমে ডুব দিয়েও কোনো তল পায় নি। গভীর পুকুর, জেলে বেচারা শীতে কাঁপছে, ভবতোষ বাবু, পুলিশ কে বলে আগে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। তার জাল পড়ে রইল সে বাড়ি গেল। বার বার বলল বাবু আমি গরীব মানুষ আমার ঐ "একটাই জাল ওটা যেন আমি পাই।" ভবতোষ বাবু পুলিশের সামনে বলেন, "পুনীল, তুমি আজ থেকে আমাদের পুকুরে জাল দিচ্ছ না। তুমি নিশ্চিন্তে বাড়ি জালের কিছু হলে আমি ক্ষতি পূরণ দেব।" পুলীন, বাবুকে নমস্কার জানিয়ে, বাড়ির দিকে চলে গেল। ভবতোষ বাবু পুলিশ কে বললেন, কিছু যদি না মনে করেন তবে একটা কথা বলি। - - না না আমি কিছু মনে করব না। আমার নাম সুরেশ আমি এখানে নতুন এসেছি, আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি এখানে এতো লোকজন জমায়েত হয়েছে,  সেই জন্য এলাম। - ও আমি ভাবলাম আপনাকে কেউ খবর দিয়েছে। ছোট তুই বাড়ি যা মনে হচ্ছে তোর দিদি স্টেশনে এসে গেছে নিয়ে আসতে হবে। - হ্যাঁ বাবা মশায় আমি যাচ্ছি। ভবতোষ বাবু জমায়েত হওয়া লোকজন কে বললেন, তোমারা সব যাও এখানে কিছু হবে না। যে যার কাজে যাও। লোকজনের মধ্যে গুঞ্জন উঠল, বিভিন্ন ধরনের কথা, কেউ কেউ বলছে আরে এদের অনেক কীর্তি আছে। কিছু বেড়িয়ে পরবে। পূর্ব পুরুষ জমিদার ছিল অনেক মানুষ কে ঠকিয়েছে, সেসব কিছু পুকুরে ডুবিয়ে ছিল। এখন উঠছে, দেখ ওসব বলিস না। এখনও যা আছে সেটা জলের তলায়। সুরেশ বাবু বলেন "আপনারা আসুন যা উঠবে জানতে, ওটা আমাদের তোলার ব্যবস্থা করতে দিন।" সমবেত লোকজনের মধ্যে থেকে ভেসে এলো, "ঠিক বলেছেন যা উঠবে আমরা জানতে পারব।" সুরেশ বাবু, "হ্যাঁ জানতে পারবেন। দেখুন আপনাকে একটা কথা বলিছি।" - "আমি ভবতোষ মজুমদার, এ আমার ছোট বেলার বন্ধু কেশব দাশগুপ্ত।" সুরেশ -" দেখুন ভবতোষ বাবু আমি একটা ব্যবস্থা করতে পারি যদি আপনি অনুমতি দেন। আর কিছু টাকা যদি খরচ করেন তবে। " কেশব বাবু" বললেন কী ব্যবস্থা? - - "কাছাকাছি শহর থেকে ডুবুরি আনিয়ে নামাতে পারি। কিন্তু কিছু টাকা খরচ করতে হবে। বিনা মজুরিতে সে কিছু করবে না।" ভবতোষ - সে করা যাবে আপনি ব্যবস্থা করুন। এসব কথা হওয়ার পর সুরেশ বাবু সেখান থেকে জিপ নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। লোকজন অনেক টা কমে এসেছে। ভবতোষ বাবু কেশব বাবু কে বললেন, কেশব কী করা যাবে এতো ছেড়ে চলে যাওয়া যাবে না। " কেশব -" ঠিক কথা পুলিশ তো বলল ডুবরি নিয়ে আসবে। " ভবতোষ -" আবার আসবে তো! "কেশব - না না কথা শুনে মনে হল ভালো লোক, ও আবার আসবে।" জড়ো লোকজনের মধ্যে থেকে একজন বলল, " এ বড়ো বাবু ঠিক আসবে কথা যখন দিয়েছে তখন নিশ্চয়ই লোক নিয়ে আসবে।" এ সব কথা যখন হচ্ছে তখন জেলে এল, সংগে আরও দু - চার লোক আছে। জেলে বলল, " বাবু আপনি যদি বলেন তবে এরা একটু চেষ্টা করে, আমার জাল টাও উদ্ধার হয়।" - -" তুই দেখেছিস এখানে পুলিশ ছিল যদি অন্য কিছু হয়। সুরেশ বাবু আবার ডুবরি নিয়ে আসবে বলে গেছেন। "আমরা একটু চেষ্টা করি। "কেশব -" এই শীতে তোমাদের  কষ্ট হবে।" এগারোটা বাজল তো একটু দেখি।" ওরা তৈরি হয়ে এসেছে, কথা বলতে বলতে নাছোড় বান্দা জেলেরা জলে নেমে পরেছে। একজন পাড়ে দাঁড়িয়ে বাকী রা জলে। শীতের কনকনে জলে ডুব দিচ্ছে। একজন ডুব দিয়ে অনেক খন পর জাল ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে পাড়ের কাছে এসে বলল - " বাবু বড়ো একটা বাক্স মতো রয়েছে। মাছ গুলো ছটফট করছে আর বাক্স সমেত জড়িয়ে পরছে।" এসব যখন চলছিল সেই সময় সুরেশ বাবু জিপ নিয়ে হাজির। সঙ্গে দুজন লোক ওরা মনে হয় ডুবুরি। একজন তো পোশাক পরে তৈরি চট করে জলে নেমে পরল। আরেক জন তার কোমরে বাঁধা রশি ধরে আছে।  জল থেকে উঠে এসে ডুবুরি বলল - নীচে সিন্দুক মত আছে। সুরেশ বাবু -" ওটা তোলার ব্যবস্থা করে ফেলুন।" পুনীল " বাবু আমার জাল রক্ষা করে করুন, গরীব মানুষ বাবু আমার জাল কেনার টাকা নেই।" ডুবুরি দের সব ব্যবস্থা ছিলো, গ্যাস সিলিন্ডার মুখোশ জামা সব, যে জলে নেমে ছিল। সেই আবার একটা হুক বাঁধা মোটা রশি নিয়ে জলের নিচে গেল, মানে ডুব দিল।

No comments:

Post a Comment