Monday, 26 November 2018

মাননীয়া শিক্ষা মন্ত্রীর অবগতির জন্য।

মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী আপনি সব টা মনে হয় জানেন। হয়তো বা কম বেশি জানেন, বা জেনেও অন্য কথা বলছেন। আপনি আপনার শিক্ষক সংগঠন কে সরকারের সাফল্য প্রচার করতে বলছেন। সে আপনি বলতে পারেন। আপনার দলের নামে শিক্ষক সংগঠন। পশ্চিমবঙ্গের আর কোনো শিক্ষক সংগঠন কোনো রাজনৈতিক দলের নামে নেই। আপনি নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সংগঠন কে বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন বলছেন। আমি বলছি নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সংগঠনের সকলে বামপন্থী নয়। যদি তাই হতো তবে বামফ্রন্ট সরকার হেরে যেত না। অনেক শিক্ষক আছেন যারা শিক্ষক আন্দোলনের ইতিহাস জানেন না। আপনি হয়তো জানেন যে নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সংগঠন তৈরি হয়েছিল, ১৯৩৫ সালে। যে সংগঠন কে  নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাষ্টার দা সূর্য সেন ।আর সি পি আই এম  পার্টির জন্ম ১৯৬৭সালে, বামফ্রন্ট সরকার তারও পরে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে ১৯৫৮ সালের আগে শিক্ষকদের কোনো বেতন কাঠামো ছিল না। আপনি হয়তো এও জানেন যে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহর লাল নেহরু বলেছিলেন যে এরাজ্যে শিক্ষকের বেতন তার বাড়ির চাপরাশির থেকে কম।আপনি হয়তো জানেন ১৯৬৭ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসে শিক্ষকদের জন্য কিছু আইন করেন। যার মধ্যে একটা ছিল শিক্ষকের আবেদন ছাড়া তাকে বদলি করা যাবে না। ঐ সরকার প্রথম পে কমিশন গঠন করে ছিল। যেখানে শিক্ষক সহ আরও অনেক কর্মী কে তার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। শিক্ষক সহ সমগ্র সরকারি কর্মীদের দূর্ভাগ্য সেই সরকার কে ১৯৬৯ সালে ভেঙে দেওয়া হয়। জরুরি অবস্থা জারি করে দেওয়া হয়েছিল। সেই জন্যই পশ্চিমবঙ্গের কর্মী কুল ষষ্ঠ বেতন কমিশন পায় আর কেন্দ্রীয় কর্মীদের সপ্তম বেতন কমিশন। এতো সত্ত্বেও বামফ্রন্ট সরকার কর্মী দের কেন্দ্রীয় সরকারের হারে বেতন দিয়ে গিয়েছে। ১৯৬৯ সালে নির্বাচিত যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দেবার পর, বেছে বেছে সেই সব শিক্ষক কে যেখানে সেখানে বদলি করে দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষক যদি বদলি অস্বীকার করেছেন তবে তাকে মুচলেকা দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। না মুচলেকা দিলে সাময়িক বরখাস্ত করা হতো। আমার বাবা এগারো মাস সাময়িক বরখাস্ত (suspended) ছিলেন এখন যে টা প্রায় হচ্ছে, নিখল বঙ্গ করেছ তবে তোমায় বদলি করে দেওয়া হবে। নয়তো বিভিন্ন রকম ভাবে খুঁত খুঁজে বের করে এনে তাকে সাময়িক বরখাস্ত (suspended) করে রাখ। এরকম সাময়িক বরখাস্ত শিক্ষক কত আপনি   নিশ্চয়ই জানেন। বিভিন্ন রকম লোক নিয়োগ করে রেখেছেন, খুঁত খোঁজার জন্য।সিঙ্গুরে ফনী বাবু বলছেন যেখানে ধমক দিয়ে কাজ হবে। কথা টা হয়তো পাল্টে ফেলবেন, সেই জন্য ভাবছি এবার এলে ওনার সব কথা ও কাজ রেকর্ড করে রাখব। আপনি বলেছিলেন শিক্ষকরা তাদের দাবি গুলো জানে না। আমি বলেছি উস্থি নামক সংগঠনের উদ্ভব হয়েছে, নিখল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কে ভেঙে দিতে। আপনি ও দেখছেন আমরা ও দেখছি, যে শুধু নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি নয়। আপনার দলের অনেক শিক্ষক ঐ নতুন দলে বা সংগঠনে যোগ দিয়েছেন ।এবার শিক্ষকদের দাবি গুলো লিখছি, কারণ আপনি বলেছেন অনেক শিক্ষক দাবি গুলো জানে না। উস্থি এই নতুন সংগঠনের একটাই দাবি PRT স্কেল। আমি বা নিখিল বঙ্গ   প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি মনে করে PRT স্কেল প্রাথমিক শিক্ষক দের পাওয়া দরকার। তবে এখন এইচ এস স্কেল দিন। কারণ পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা অন্য রাজ্যের থেকে বেশি, এখানে পি আর টি স্কেল দেওয়া সম্ভব নয়। তাই PB2 থেকে PB3 সর্বোচ্চ গ্রেড পে ৩৯০০ টাকা দিয়ে এইচ এস স্কেল। ডিএ পে কমিশন, আর প্রতিহিংসা মুলক বদলি করা যাবে না। এখন আবার নতুন ভাবে বদলির চিঠি আসছে। এক চক্র থেকে অন্য চক্রে স্থায়ী ড্রাফট হয়ে আসছে। স্বাক্ষর করেছে দুবছর আগে চেয়ারম্যান বা সভাপতি। এই ড্রাফটের নিয়ম ছিল যেখানে সিংগেল টিচার হয়ে যাচ্ছে, বা গেছে সেখানে এস আই এস সেই চক্রের যে বিদ্যালয়ে বেশি শিক্ষক আছেন, সেখান থেকে একজন কে ঐ বিদ্যালয়ে পাঠাবেন। এই নিয়ম টা কে এখন সভাপতি ব্যবহার করছেন, যে হেতু তিনি সভাপতি নেই, তাই তারিখ থাকছে দুবছর আগের। কি অদ্ভুত আর কী সুন্দর ব্যবস্থাপনা। সেই জন্যই নিখিল বঙ্গ দাবি সচ্ছ বদলি নীতি, প্রতি হিংসা থাকবে না। আবেদনের ভিত্তিতে বদলি চাই। আরেক টা দাবী বর্তমান সিলেবাসের আমুল পরিবর্তন, প্রাক প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি, আর তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান থাকবে। আরেক টা দাবী প্রতি বিদ্যালয়ে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা করতে হবে। কম্পিউটার দিতে হবে। পাঠ্যবিষয় বেশিরভাগটাই আধুনিক অনলাইন করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো কে আধুনিক projector দিতে হবে। প্রাক প্রাথমিক ছাত্র ছাত্রীদের পোশাক দিতে হবে। আধুনিক শ্রেণি কক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে। মি ডে মিলের টাকা দশ টাকা করতে হবে। সময় মতো সব বই বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিতে হবে। সর্বশিক্ষা অভিযানের নাম করে গোছা গোছা ফর্ম ফিলাপ বন্ধ করতে হবে। এই ফর্ম পূরণ করে কোনো বাস্তব কাজ হয় না। শিক্ষক দের শিক্ষা বর্হিভূত কাজে নিয়োগ করা যাবে না। বিদ্যালয় গুলোর বিদ্যুৎ বিল সরকার কে মেটাতে হবে। পূর্বের চালু খুচরা খরচ জন্য টাকা দেওয়া হতো। সেটি চাল করতে হবে।  বর্তমানে আরেকটা দাবি উঠেছে বিদ্যালয় স্তর থেকে টাকা বরাদ্দ করতে হবে। না হলে এবছর বিদ্যালয় স্তর থেকে খেলে পঞ্চায়েত স্তরে যাচ্ছে। আগামী বছর স্কুল স্তর বন্ধ হয়ে যাবে। খেলা করতে হবে, এই আদেশ পাঠিয়ে দিলাম ওতে আর হবে না। কারণ ক্লাব থেকে প্রায় সর্বত্র টাকার ছড়াছড়ি আর খেলা শিক্ষার অঙ্গ বলে টাকা নেই। এসব আর হবে না, আপনি বা আপনারা সবাই সততার প্রতীক।আশা করি সব টা সত্যিই বলছেন, বামফ্রন্ট সরকার দেনা রেখে গেছে। আমার যতদূর জানা আছে সব রাজ্য সরকারের দেনা থাকে, সরকার পরিবর্তন হলে সেই দেনা ঐ সরকার বহন করে। কারণ ঐ দেনা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। আমার সংগ্রহ করা একটি তথ্য দিলাম ছবি সহ।
আপনারা সততার প্রতীক, আপনাদের দেখে আমরা শিখব। আপনি বলেছিলেন শিক্ষকরা তাদের দাবি কী জানে না। উপরে অনেক গুলো লিখেছি। আরও আছে দিচ্ছি, 
আপনি বলছিলেন এই দাবি ২০০৯ সালের তাহলে আপনি স্বীকার করে নিয়েছেন। নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতি বাম আমলে ও আন্দোলন করত। ঠিক বলেছেন, তবে তখন ডিএ পে কমিশন নিয়ে দাবি করতে হয়নি। কারণ তারা দেনার অজুহাত দিয়ে ডিএ বা পে কমিশন বন্ধ করে দেয় নি। আর মি ডে মিলের টাকা বাড়ানোর দাবি কেন্দ্র যখনই বাড়িয়েছেন, রাজ্য সরকারও বাড়িয়েছেন। সেই কারণেই ২ টাকা ৮০ থেকে বেড়ে ৩ টাকা ৮৪ পয়সা হয়ে ছিল। সিলেবাস পরিবর্তনের দাবি সেও অনেক বার মেনে নিয়েছে। আপনারা ২০১২ সাল থেকে মৃত শিক্ষকের পরিবারের যোগ্য প্রার্থীর চাকরি বন্ধ করে দিয়েছেন। আর টি ই আইন দেখিয়ে, উক্ত আইন অনুযায়ী ভর্তি করেছেন। যাতে বাবা মা কে সন্তান জন্ম দিতে হবে ১ লা জানুয়ারীর মধ্যে, অথচ বেসরকারি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ওসব নিয়ম নেই। যে পাঁচ বছরের বাচ্চা কে জি তে বাংলা অঙ্ক ইংরেজি পড়ে এলো সে মজারু কুটুম কাটাম পড়ছে। আর টি ই আইনের দোহাই দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা কে ধ্বংস করার  কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা আপনারা বাস্তব করে ছেড়ে দিচ্ছেন। এই সব বই বা সিলেবাসের জন্য অধিকাংশ বাবা মা তাদের সন্তানদের আর সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করছে না । অনেক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে, অনেক বিদ্যালয় বন্ধ হবার মুখে। তার উপরে শিকক নিয়োগ সে আর বলে কাজ নেই। পরিশেষে বলি যদি পড়েন, তবে আমার প্রণাম নেবেন। আর দাবি গুলো পূরণ করে দেবেন, আর আর টি ই আইন সংশোধন করে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা কে বাঁচাবেন কেমন। 

No comments:

Post a Comment