Thursday, 27 September 2018

শিল্প তামাশা।

আসুন আবার আমরা, গ্রামের সেই চায়ের দোকানে কানে ফিরে আসি সন্ধ্যা বেলা সকলে কাজ থেকে ফিরে এসে, এই চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিতে থাকেন। সবাই বলতে যারা আসে তারাই প্রায় প্রতিদিনই আসে বিভিন্ন রকম আলোচনা হয়। আজ একটু অন্য রকম হয়ে গেল। কারণ মন্টু কাজ থেকে ফিরে এসে চায়ের দোকানে চা খেতে এসেছে। সে ওপারে মানে গঙ্গার ওপারে চটকলে কাজ করে। সে খুব কমই এই দোকানে আসে, আজ কাজ থেকে ফিরে এসে চায়ের দোকানে চা খেতে এসেছে, কিন্তু তার মন টা খারাপ। গৌর জিজ্ঞেস করলেন – ” মন্টু কেমন আছিস রে?” মন্টু – ” আজ পর্যন্ত ভালো ছিলাম, কাল থেকে থেকে আর ভালো থাকব না।” হরি – ” কেন রে কী আবার হলো?” মন্টু :- ” কাল থেকে কারখানা বন্ধ করে দিল মালিক। আজ সন্ধ্যার পর সকল কে ডেকে বলে দিল। মাল বিক্রি নেই তাই কারখানা বন্ধ থাকবে।কাল থেকে বেকার হয়ে গেলাম। ” গৌর -” তুই একা তুই ভাব এরকম কত হচ্ছে। অনেক কারখানা আজ বন্ধ। তোদের চটকল কথায় কথায় বন্ধ। তুই ভাব হুগলির অত বড়ো মোটর কারখানা হিন্দু স্থান মোটর সেও বন্ধ। আমাদের রাজ্যে আর নতুন কোনো কারখানা হবে না। টাটার মতো আন্তর্জাতিক কোম্পানি কে আমরা তাড়িয়ে দিয়েছি তার একটা প্রভাব পরবে না। ” হরি -” শুধু কী টাটা উইপ্র, ইনফোশিসের মতো কোম্পানি যারা তথ্য প্রযুক্তি শিল্প গড়ে তুলেছে সাড়া বিশ্বে। তাদের আমরা জায়গা দিইনি, শুধু রাজনৈতিক কারণে। জানিস সমরের ভাইপো কম্পিউটারে সায়েন্স না ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে পুনে না ব্যাঙ্গালোর গিয়ে ছিল চাকরি করতে ওকে এবং ওর মতো আরও কয়েক জনকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তোদের বেঙ্গলে যেদিন তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা হবে তখন চাকরি করবি এখানে আমরা কাজ করব। ” ভোলা ছিল সে বলল -” কেন দিদি এতো শিল্প সম্মেলন করছেন, এতো প্রতিটি শিল্প সম্মেলনে শিল্প পতিরা বলছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন। আবার বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন শিল্প আনতে, এই এখন তিনি জার্মানি তে আছেন। শিল্প হচ্ছে তোমরা জানো না। ” হরি -” ঠিক শিল্প হচ্ছে আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সবাই কানা হয়ে গেছি। শিল্প হচ্ছে বোম শিল্প বন্দুক শিল্প মদ বা চুল্লু শিল্প। মনে আছে দিদি ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিলেন আমি ক্ষমতায় এলে চুল্লু বন্ধ করে দেব। কারণ বিষাক্ত চুল্লু খেয়ে অনেক মারা গিয়েছিল। আর এখন উল্টো চুল্লু করতে দেওয়া হবে শাসক দলকে সমর্থন করলে। তাছাড়া কত দেশি মদের দোকান হয়েছে। তুই শুধু এক দিন দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ে দিয়ে যাবি। বাম আমলে অনেক ছোট ছোট কারখানা হয়ে ছিল। ওখানকার স্থানীয় বাসিন্দা যুবকরা কাজ করতে শুরু করেছিল। এখন অনেক গুলো বন্ধ হয়ে গেছে, মানে রাজনৈতিক দাদার তোলার চাপে বন্ধ হয়ে গেছে। এই রাজনৈতিক দাদারা শাসক দলের।কত শিক্ষিত বেকার রয়েছে একটা চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । ” গৌর -” আরে গ্রুপ ডি পদে পিএইচডি ডিগ্রি ধারি আবেদন করছে। ৯৫০ টা পদ খালি আবেদন এগারো লক্ষ। ” হরি –” নির্বাচন এলে টাকার হরির লুট করা হচ্ছে, আর সেই টাকা দিয়ে বোমা তৈরি করা হচ্ছে। আচ্ছা গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কী হলো, বলল উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে। আমরা টিভিতে কী দেখলাম বোমা বন্দুক আর নানা অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে বিরোধী দলের নমিনেশ আটকাতে হবে। কত গুলো নিরীহ মানুষের প্রাণ চলে গেল। কোন তদন্ত নেই কোনো কেস নেই। ভাবছিস যে লোক গুলো এসব করছে তারা বিনা পয়সায় করছে। গরিব মানুষ অল্প শিক্ষিত মানুষ তাদের পয়সা দিয়ে এসব করানো হচ্ছে। ভোলা – ” টাকা দিলেও তারা অপরাধ করবে কেন?” গৌর – ” আরে গরীব মানুষ মানুষ তাকে টাকার লোভ, ঘর করে দেওয়া প্রতিশ্রুতি, একশো দিনের কাজের না কাজ করে পয়সা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কে লোভ সামলাতে পারে। আর লোক মারলে ও কেস হবে না, এসব হলে কেন লোক যাবে না শুনি। এককথায় গুণ্ডা বাজির দল তৈরি করা হয়েছে। যা খুশি তাই করো কিছু হবে না। ” মন্টু -” এতে কিন্তু রাজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। ” হরি –” তাতে নেতা মন্ত্রীর কিছু যায় আসে না, তারা নিরাপত্তা নিয়ে ঘোরে। আর টাকার পরিমাণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে, এমন একজন নেতা বা সাংসদ আছে যখন সাংসদ হলো তখন কিছু ছিল না। এখন তার বাড়িতে এক কোটি টাকার ঝাড়বাতি, রারিং সিঁড়ি, বাড়িতে কী নেই। দেখলে বা শুনলে চমকে উঠতে হবে। সাধারণ মানুষ এদের কথায় নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মরছে। ” ভোলা -” দিদি যে এতো ঘুরে বেড়াচ্ছে শিল্পের জন্য তাহলে কি শিল্প হবে না! ” ( উত্তর লেখকের জানা নেই, কারণ লেখক দেখছেন তিনি বিদেশ ঘুরেছেন অন্য রাজ্যে গিয়ে শিল্প সন্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু ছোট বড়ো কোনো শিল্প নেই, কেবল প্রতিশ্রুতি, এসব বিরোধীতা করতে লিখছিলাম না। আজ ঘরে ঘরে শিক্ষিত বেকার কাজের হাহাকার, কোথায় কাজ?)


No comments:

Post a Comment