Saturday, 8 September 2018

সোনার গদা ।( শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়) ২য় অংশ

একে পুরনো দিনের জমি দার তাও আবার পুকুর থেকে পুরোনো সিন্দুক। ভেতরে কী আছে না জেনে বাড়ি ফিরতে চান না কেউ, কিন্তু সুরেশ কায়দা করে সেটা ওখান থেকে জমিদার বাড়িতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করল। সেটিকে জল দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করা হল। ধোয়ার পর যে চেহারা দেখা গেল তা দেখে ভবতোষ বাবুর চক্ষু চড়ক গাছ। দেখা গেল সিন্দুক কোনো রকম ভাবে বন্ধ করা। একটা চাবি যেন লাগানো আছে। ডুবুরিরা কোনো রকমে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খুলে ফেলল। ভেতরে কিছু নেই। ভবতোষ বাবু বললেন, আমি জানতাম কিছু থাকবেনা। কারণ ওর মধ্যে যে সব বস্ত ছিল তা চুরি হয়ে গেছে। সুরেশ বাবু বললেন কী ছিলো? ওতে দারুণ একটা দামি বস্তু ছিল, কারণ সিন্দুক টি ঠাকুর ঘরে ঢুকে একটি গোপন কুঠরিতে ছিল। দেওয়ালের সঙ্গে আটকানো ছিল। ওতে ঠাকুরের কিছু গহনার সঙ্গে সোনার তৈরি একটি গদা ছিল। যে টির মাথায় একটা হিরে বসানো ছিল। সুরেশ বাবু কী বলছেন? তার মানে এটা চুরির ঘটনা। তা এই সিন্দুক কোথায় থাকত? ভবতোষ - ঐ ঠাকুর ঘরে ঢুকতে এ একটি ঘরে এ দেওয়ালের সঙ্গে আটকানো ছিল। পূজোর সময় ছাড়া আর কোন সময় ও ঘরে কেউ ঢুকত না। সুরেশ বাবু সব দেখলেন এবং সকালের ঘটনাও শুনলেন। ডুবুরি ও জেলে দের টাকা দিয়ে বিদায় দেওয়া হলো।
তখন কেশব বাবু বললেন " ও এই জন্য তুই সকালে বলছিলি আমি পুরোণ দিনের কোনো কিছু জানি কিনা। দেখ তুই যদি সকালে আমায় কথাটা বলতিস। যে হাঁটতে গিয়ে ও সব তোকে বলেছে তাহলে একটা কিছু ভাবা যেত।" ভবতোষ বাবুর বড়ো ছেলে বলল "বাবার ঐ এক দোষ কোন কিছু খোলা খুলি বলেন না। শুনুন আপনি কাল থেকে একা কোথাও যাবেনা। সঙ্গে কাউকে নেবেন, লোক আজ ওসব বলেছে কাল কিছু করে দিলে, না না আপনি একা একা কোথাও যাবেন না। " ছোট ছেলেও একই কথা বলল, কেউ কিছু বললে আমাদের এসে বলবেন। "মেজ ছেলে উপস্থিত ছিলেন, বলল, না না বাপি একলা ছাড়া যাবে না। এ কদিন আমি সঙ্গে যাব, এর পর তোরা পালা করে যাবি। বড়দা একদিন তুই একদিন। দেখছি রাস্তায় কে কি বলে। সুরেশ বাবু বললেন, আপনার ছেলেরা ঠিক বলছে, আপনি একা একা কোথাও যাবেন না। এটি কোথায় ছিল চলুন দেখে আসি? ভবতোষ বাবু সহ সকলে ঠাকুর দালানের দিকে এগিয়ে গেলেন।
এবং যা দেখলেন তা বেশ চিন্তার, বিশেষ কায়দায় তালা খোলা হয়েছে দেওয়াল থেকে ঐ সিন্দুক বার করা হয়েছে নিপুণ ভাবে দেওয়াল বেশি ভাঙা হয়নি। অথচ সিন্দুক বার করে নেওয়া হয়েছে।
সুরেশ বাবু ভাবতে লাগলেন, এতো নিপুণ হাতের কাজ।
তিনি নিজে থেকেই বললেন আমাকে ভালো করে তন্দন্ত করে দেখতে হবে। ইতি মধ্যে পুরো কুসুম ডিহি তে রটে গেছে যে জমিদার বাড়ির পুকুর থেকে সিন্দুক উঠেছে।
তখন অনেক টা সন্ধ্যা হয়ে গেছে, সকল গৃহস্থের বাড়িতে শঙ্খ ধ্বনি শেষের দিকে। সুরেশ বাবু সিন্দুক কী কী ছিল তার তালিকা তৈরি করতে লাগলেন। সব থেকে দামী জিনিস টা ছিল একটা সোনার গদা যার মাথায় একটা হীরে বসানো ছিল। গদা টা দুর্গা পুজোর সময় গনেশের হাতে দেওয়া হতো। এবার পূজোর সময় সে আর হবে না। কি হবে ভবতোষ বাবুর ভাবনায় আসছে না। সুরেশ বাবু সব কাজ শেষ করে থানায় ফিরে এলেন।
এর পর দিন পনেরো কেটে গেছে, ভবতোষ বাবু  যে কদিন মর্নিং ওয়াক গেছেন, কোন ছেলে সে বড়ো ছেলে হোক ছোট মেজ বা কেশব বাবু সঙ্গে গেছেন। কিন্তু আজ তিনি কাউকে সঙ্গে না নিয়ে বেড়িয়েছেন, আজ আবার সেই একই জায়গায় একটি লোক এসে বলে গেল, ও আর খোঁজ করিস না। এতো কুয়াশা যে কাছা কাছি কিছু দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। ভবতোষ বাবুও যে ভাবে ঢেকে ঢুকে বেড়িয়েছেন, তাতে চেনার উপায় নেই বললেই চলে, তবুও লোক টি তাকে চিনতে পারল।
এমন সময় সুরেশ বাবু যেন ধূমকেতুর মতো উদয় হলেন। ভবতোষ বাবুর কাছে এলেন, বললেন - "ধরতে পারলাম না।" ভবতোষ বাবু ঘাবরে গিয়ে বললেন -- " তুমি এই ভর বেলা!" সুরেশ - " আর বলেন কেন আপনার ছেলেরা আর কেবশ বাবু বলল তারা আজ আসবে না, কিন্তু আপনি বেড়বেন। তাই আমি নিজেই, কিন্তু লোকটি কে চিনতে পেরেছেন?" ভবতোষ - "এই কুয়াশায় চিনি কি করে?" সুরেশ --" তা ঠিক যা কুয়াশা আমি ভালো করে দেখে নিতে পারছি না। আপনার কাছে এসে কী জেন বলতে শুনলাম? " ভবতোষ -" ওই যে ওটা আর খুঁজিস না।" সুরেশ --" তার মানে কালপিঠরা আপনাকে ভাল রকম চেনে। " এ ভাবে হাঁটতে হাঁটতে তারা ভবতোষ মজুমদারের বাড়ির সামনে এসে পরেছেন। সুরেশ বাবু বলেন দেখুন দেওয়ালে পোস্টার। দুজনেই দেখলেন ওটা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ( ক্রমশ)

No comments:

Post a Comment