Tuesday, 23 October 2018

জোনাকির রক্তের খিদে ।এর সপ্তম গল্প। দিনে ডাকাতি।

আমরা ছোট বেলায় শুনেছি শীতের রাতে ডাকাতি করতে আসে। কারণ শীতের রাত বড়ো অনেকক্ষণ সময় পাওয়া যায়। আর শুনেছি ডাকাত দলের সর্দার থাকত। সর্দার যা বলত তাই করতে হতো। আবার অনেকে ডাকাত সর্দার কে নিয়ে গল্প লেখা হয়েছে। যেমন রঘু ডাকাত ডাকাতি করে গরীব মানুষ দের বিলি করত। মানে গল্পের মধ্যে পড়েছি সে দাঁড়িয়ে থেকে মেয়ে দের বিয়ে দিত। ঠিক ইংরেজি ভাষায় একটা গল্প পরে ছিলাম রবীনহুডের মতো। এরকম অসংখ্য গল্প কাল্পনিক বাস্তবের গল্প। সিঙ্গুরে থানার মল্লিক পুরে ডাকাতি কালী মাতা মন্দিরের নাম সকলের জানা। যাহোক ঐ রকম পুরনো ডাকাত দল নাকি অনেক জমিদারি তে থাকত। রনপা পড়ে হারে রে রে করে তারা কোনো প্রজা ছোট জোতদার এবং ইজারাদার একটু বা অন্য জমিনদার যদি একটু টাকা পয়সা বেশি করে ফেলেছে সঙ্গে সঙ্গে তার বাড়িতে দল পাঠিয়ে ডাকাতি করানো ।এসব বাংলার জমিদার রা করতো। বাংলার জমিদার তো তাদের গুনে নুন দিতে বাকি ছিল না। আবার এও শোনা যে কোনো কোন জমিদার এমন আইন চালু করে ছিল। তার জমিদারি তে কেউ যদি নতুন বিয়ে করে আনে । তবে প্রথম রাত জমিদারের সাথে থাকতে হবে এবং তা না হলে বেগার শ্রম খাটতে হবে।
আমি এসবের কথা লিখব না। গত কয়েক দিন আগে একটা বড়ো সোনার  দোকানে অদ্ভুত ডাকাতি হয়েছে। কী বড়ো রাস্তার পাশে দোকান একদিন সকাল থেকে লোক দেখলো কতগুলো লোক রাস্তার কাজ করছে একটা জায়গায় ঘিরে দিয়ে পিচ তুলে গর্ত করছে। সকলে ভাবল রাস্তার নীচ দিয়ে জলের পাইপলাইন সারানো হবে। এর আগেও ঐ জায়গাটা খোঁড়া হয়ে ছিল। সেই জায়গা আবার খোঁড়া হচ্ছে । এর ঠিক দুদিন পর শোনা গেল। সোনার দোকানে বড়ো ডাকাতি হয়েছে। কয়েক লক্ষ টাকার গয়না ক্যাশ বা নগদ টাকা চুরি করে পালিয়েছে। কোথা দিয়ে ঢুকে ছিল না। রাস্তা থেকে সিঁদ কেটে, সবাই ভাবছিল পাইপলাইনের কাজ হচ্ছে। তাহলে ওটা ছিলো ডাকাতির জন্য কাটা সিঁদ। জল কাদা থেকে বাঁচতে সুরঙ্গের বড়ো বড়ো তেলের ড্রাম ব্যবহার করা হয়েছে । খুব বুদ্ধিমান ডাকাত, পুলিশ এলো সব রকমের নমুনা সংগ্রহ হলো। হাতের ছাপ দেরাজের চাবি ভাঙার ছবি। আর একটা ভালো ক্লু পাওয়া গেল। গর্তের ভেতরে ব্যবহৃত ড্রামের গায়ে লেখা দুটো ফোন নাম্বার। এ ছাড়া তেমন কিছু নেই। শুরু করা হয়েছে তদন্ত প্রথম দোকানের কর্মচারী দের জিজ্ঞাসা বাদ। তেমন কিছু পাওয়া গেল না। তবে এও ঠিক দোকান কর্মী না থাকলে এতো সুন্দর ডাকাতি সম্ভব নয়। জিজ্ঞাসা বাদে তেমন কিছু উঠে এল না। এবার ঐ ড্রামের ঠিকানা ধরে এগোতে হবে। দেখা গেল ঐ ঠিকানা এদেশের নয় বাইরের দেশের। পুলিশ যখন অনেক দিন সময় লাগিয়ে দিচ্ছে ।তখন দোকান মালিক তার বন্ধুদের সাহায্যে সত্যেন কে খবর দিল। সে এসে মালিক কে নিয়ে হাজির হলো থানায়। নিজের পরিচয় দিয়ে বলল আমি আপনাদের সাহায্য করতে পারি এই কেসে ঐ ড্রাম গুলো থেকে ধরা পড়বে আসামী। পুলিশ অফিসার বলেন কী করে? এই ড্রামের ঠিকানা বিদেশের ব্যবহার করেছেন স্থানীয় ও এন জি সি। তাদের সাথে কথা বলে দেখতে হবে। কারা সরাসরি আমদানী করতে পারে। কারণ বিদেশের হলেও ওদের নিশ্চয়ই কোন কিছু ব্যবস্থা আছে যেটা দিয়ে জানে এই ড্রাম কার কাছে যাবে। সে ভাবে ওরা পাঠিয়ে দেয়। সত্যেনের কথা মতো কাজ শুরু করে সুফল পেলেন। তিন চারটি ঠিকানা পাওয়া গেল। পুলিশ সব ঠিকানায় যোগাযোগ করে ওর মধ্যে মধ্যম গ্রামের একটি ঠিকানা পেল যেখানে এই পূরাণো খালি ড্রাম বিক্রি করা হয় বা রিসাইক্লিন করা হয়। এবার পুলিশ ছুটল সেখানে, সেটা একটা ছোট খাটো কারখানা। ওদের কাছে খাতা আছে কাকে কবে কত গুলো ড্রাম বিক্রি করেছে। এমন সময় এক দিন চিঠি এলো আঁকা বাঁকা হাতের লেখা। লেখা আছে "বড্ড বাড়াবাড়ি হচ্ছে অফিসার। তবে যার কথায় এতদিন পরে এসব হচ্ছে। তাকে আমরা চিনে ফেলেছি। শালা সুখের টিকটিকি সত্যেন বোস তাই না। শালা মহাধরি বাজ। ওকে দেখে নেব, কিন্তু আর এগলে ফল ভালো হবে না। "পুলিশ বুঝতে পারল তারা ঠিক পথে এগিয়েছে । সত্যিই বাবু কে ডেকে তার নিরাপত্তার জন্য সিভিল ড্রেসে পুলিশ মোতায়েন করা হলো। এবার একদিন সত্যেন ও তার কজন সঙ্গী ও সাথে ঐ সিকিউরিটি গার্ড কে নিয়ে মধ্যম গ্রামের পাশে হাজিপুর বলে একটা জায়গায় পৌঁছলেন। সেখানে বাবলু শেখ কাটা তেলের ব্যবসা করে খুঁজতে লাগলেন। সঙ্গীদের অনেক টা দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে নিজে আর গার্ড কে নিয়ে ভেতরে গেলেন। খুঁজতে খুঁজতে বাবলু শেখের খোঁজ মিলল। সত্যেন বলল আমার কাছে অনেক মাল আছে আমি সঠিক খরিদ্দার চাই। তাই খুঁজতে খুঁজতে তোমার কাছে আসা। প্রথমে তো খালি ড্রাম লাগবে, বাবলু কত টা হবে পাঁচ ড্রাম তো বটেই। অত খালি ড্রাম জানেন এক জন বছর দুয়েক আগে গোটা পাঁচেক খালি ড্রাম নিল আমি যোগার করে দিলাম। বলল তেল দেবে এখনও তাদের দেখা নেই। আমি তেল ও জায়গায়ার হাফ দাম দিয়ে দিলাম যে মাল দিলে লেন দেন চলবে তখন বাদ দিয়ে দেব। কোথায় কী? মাল এলো না ড্রাম নয় বললেই বলে পেয়ে। আমরা সে রকম নয়। সে পোশাক দেখে বুঝতে পারছি  তবে এই পোশাক পরে এসেছেন ভালো কেউ সন্দেহ করবে না । আপনারা চোরাই তেল বিক্রি করেন। আর আপনাদের পয়সা আছে, আপনারাজ যদি পয়সা খরচ করতে পারেন ড্রাম আমি যোগার করে দেব। না না আমরা ঐ লোক গুলোর মতো নয় যে তোমাকে ঠকাব। সঙ্গের অফিসার বলল - সত্যিই লোক গুলো খারাপ কাজ করেছে,, তোমার মতো লোকের পয়সা মেরে দেওয়া ঠিক করে নি। বাবলু বলল - - মেরে দিতে পারবে না। ওদের আমি চিনি। তাহলে তো কথাই নেই তোমার পয়সা পেয়ে যাবে। আমরা কবে ড্রাম পাব?
পাবেন কিন্তু আপনাদের জন্য ড্রামের দাম দিতে হবে। তেলের দামের অর্ধেক আমাদের দেবেন না। না না সে আমি ওদের চিনি বলে দিয়েছি। ঐ তো ও পাড়ার কালী সাজিদ এসে ছিল। আমরা এখন যাই, পরে ড্রাম যোগার করে রাখুন আসব। বলে সত্যেন একটা পাঁচশ টাকার নোট তার হাতে দিল। দিয়ে তারা বেড়িয়ে এলো এবং আনন্দ ধরে রাখতে পারে না। সত্যেন ও গার্ড মিলে গ্রাম থেকে অনেক টা দূরে রয়ে গেল গেল তারপর তারা খাওয়া দাওয়া করে নিল। সত্যেন তার ছোট নোট বই এ একটা কথা লিখে সকল কে দিল। তোরা থানায় যা আরো ফোর্স ও অফিসার দের নিয়ে আয় বাবলু শেখ না হলে পালাতে পারে। প্রত্যেকে একই লেখা পেল সকলে মিলে। জিপ নিয়ে হাজির হলো থানায়। তারা সত্যেনের লেখা নোট টা দিল। থানায় একজন অফিসার বাদে সবাই বেড়িয়ে গেলেন।গোটা গ্রাম পুলিশ বাবলু শেখকে ধরতে। সত্যেন আর সেই অফিসার আরও কয়েক জনকে নিয়ে বাবলু শেখের বাড়ি পৌঁছে ডাকল কেউ সারা দিল না। কারণ সে বুঝতে পেরে ছিল ওরা পুলিশ তবে পাঁচ শো টাকা নিয়ে যে রসিদ সে দিয়ে ছিল। সেই হাতের লেখা আর সেদিনের চিঠির হাতের লেখা এক। বাবলু শেখ পালাতে পারেনি সে এখানে কোথাও আছে। কিছু আশ পাশের কয়েক টা পাড়া ঘেঁটে তাকে আর কালী কে এক সাথে পেল। দু জন কে এক সঙ্গে থানায় নিয়ে এলো। জিজ্ঞাসা বাদের মধ্যে দিয়ে আস্তে আস্তে সব কথা বেড়িয়ে এলো। দুবছর পর পুলিশ সাফল্য পেল। উদ্ধার করে ফেলল চুরি যাওয়া অনেক টা জিনিস।

No comments:

Post a Comment