বিজয় আর সুরেন একই গ্রামে বসবাস করে। বিজয় দের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। বাবা দীন মজুরি করে সংসার চালান। যখন কাজ থাকে না, তখন টুক টাক সবজি কিনে পাড়ায় ফেরি করেন। আবার কখনও তার মা ঘুঘনি তৈরি করে দেন। তিনি গোটা গ্রাম ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। এভাবে বিজয় দের সংসার চলে, কোন দিন খেতে পাওয়া আর কোনো দিন আধবেলা জোটে। কিন্তু বিজয় লেখা পড়ায় খুব ভালো। কোন দিন সে ফেল করে না। প্রতি শ্রেণী তে সে ভালো নম্বর নিয়ে পাশ করে উর্ত্তীন হয়। স্কুলের স্যারেরা তাকে নানা ভাবে সাহায্য করেন। আর ওদিকে সুরেন স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে। সুরেনের বাবা ধনী ব্যক্তি না হলেও অভাব নেই। জমি জায়গা আছে, আরও অনেক ছোট খাটো ব্যবসা আছে। তাদের ভাল ভাবে দিন কাটে, কিন্তু সুরেন লেখা পড়ায় খুব একটা ভালো নয়। কোন রকম পাশ করে, সুরেন দু জায়গায় টিউশন পড়তে যায়। তবূও তার ফল ভালো হয় না, সুরেনের বাবা সুরেন কে মাথা মোটা বলে ডাকেন। কিন্তু সুরেন আর বিজয় হরিহর আত্মা। একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গ্রামের মানুষ তাদের মাণিক জোর বলে ডাকে। কোথাও কিছু করতে গেলে সুরেন বিজয় কে সঙ্গে নিয়ে যায়। বিজয় সব সময় যেতে চায় না। আবার সুরেনের বাবা মা অন্য কারো সাথে বেড়তে দেয় না। অগত্যা উপায় নেই, বিজয় সঙ্গে নিয়ে যাওয়া। তখন সুরেনের মা বাবা কিছু বলেন না। একই শ্রেণী তে পড়ে কী আর করা যাবে? এভাবে চলতে থাকল বিজয় ও সুরেন মাধ্যমিক পাশ করল। অনেক কষ্টে সুরেনের বাবা ঘুষ দিয়ে ছেলে কে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি করে দিলেন। আর বলে দিলেন তুমি বিজয়ের সঙ্গে ছাড়া আর কারও সঙ্গে মিশবে না। যদি অন্য কিছু শুনেছি তবে ফল ভাল হবে না। সুরেন জানত বাবা এমনি তে খুব ভালো মানুষ, কিন্তু রেগে গেলে তিনি চণ্ডাল কোনো কিছু মানেন না। ওদিকে বিজয় খুব ভালো নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে তাকে ভর্তি হতে কোনো কষ্ট করতে হয় নি। অবশ্য তার মা বাবা শিক্ষক দের কাছে গিয়ে ছিলেন, যাতে ভর্তির টাকা পয়সা একটু কম করেন। স্কুল কমিটি শিক্ষকদের অনুরোধে তাকে প্রায় বিনা পয়সায় ভর্তি করে নিয়েছেন। এরকম ভাবে সুরেন বি এ পাশ করল আর বিজয় বি এস সি। এবার বিজয়ের চাকরি খোঁজার পালা। এই উদ্দেশ্য এক দিন বিজয় সুরেন কে বলল। চল আমরা চাকরির আবেদন করি আমার একটা চাকরি দরকার। সুরেন দের অবস্থা একটু পড়তির দিকে। ছোট খাটো দুটো ব্যবসা ছিল, সেটা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। তাই সুরেনের বাবা আপত্তি করল না। শুধু বিজয় কে বললেন, তুমি যা করবে ও যেন তাই করে। কারণ আমি জানি তুমি ভালো ছেলে তুমি খারাপ কাজ করতে যাবে না।
দুজনে কম্পিউটার শিখেছে ভালো রকম। যাতে কোন বেসরকারি সংস্থায় আবেদন করতে পারে। কারণ ২০১৪ সালের পর থেকে এই পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরি পাওয়া কঠিন। তবুও আবেদন করে যাচ্ছে যদি বেড়ালের ভাগ্যে সিকে ছেঁড়ে। সঙ্গে বেসরকারি সংস্থাও আবেদন করে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়েছে। লিখিত পরীক্ষাও দিচ্ছে। এরি মধ্যে একটা অঘটন ঘটে গেল, সুরেনের বাবা মারা গেল। আর সুরেন দের অবস্থা আর সে রকম নেই। একটু অস্বচ্ছল হয়েছে, ওর বাবা দু বোনের বিয়ে দিয়েছেন জমি বিক্রি করে। জমি জমা একটু কমে গেছে। আর বাবা বেঁচে থাকতে, বিজয় কে সাহায্য করেছেন। বেশ চলছিলো তাল কাটলো সুরেনের বাবার মৃত্যুতে। সুরেন কী করবে ভেবে পাচ্ছে না, বিজয়কে নিয়ে মাঠে যায় একটু আধটু কাজ করে আর বাড়ি আসে। এর আগে সে বেশিক্ষণ মাঠে কাজ করেনি। কয়েক দিন পর বিজয়ের একটি চিঠি এল কলকাতার একটি বেসরকারি ডাটা এন্ট্রি সংস্থা থেকে। এখানে দুজনে ইন্টারভিউ দিয়ে ছিল, কিন্তু সংস্থা কেবল বিজয় কে নিয়োগ করেছে। সুরেন ভেবে ছিল সেও হয়তো ওখানে কাজ টা পাবে। তবে বিজয় পেয়েছে তাতেও সে খুশি, কারণ বিজয় লেখা পড়ায় ভালো ইংরেজি ভাষায় ওর ভালো দখল আছে। কেন জানি না বিজয় এই কদিন সুরেনের সঙ্গে কথা কম বলছে। যেদিন বিজয় কাজে যোগ দিতে যাবে, তার আগের দিন সুরেন কে বলল তুই আমার সঙ্গে কলকাতা যাবি তো। সুরেনের মা বলল, অবশ্যই যাবে, সুরেন আমার চাকরি পায় নি তো কি হয়েছে। তুই তো পেয়েছিস ওটাই বড়ো আনন্দের। সুরেন বাড়িতে ছিল না, সে মাঠে থেকে ফিরে দেখলো বিজয় বসে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলছে। সুরেন বলল কীরে কদিন আসিস যে? কী হয়েছে বলতো তোর? না না সে রকম কিছু না, শোন না কাল কলকাতা যাব তুই আমার সঙ্গে যাবি। সুরেন বলল আরে ও আর বলতে হবে না। তুই না বললেও আমি যেতাম। কারণ তুই চাকরি পেয়েছিস আমার খুব ভালো লেগেছে। কাল কখন যাবি? খুব সকালে। পরের দিন তারা খুব সকালে কর্ম স্থলের রওনা দিল।
সেখানে পৌঁছে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ঘরের সামনে তারা বসল। দেখা গেল বিজয় কে অনেক চেনে। সকলে সুরেন কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তাকে নিয়ে একজন ম্যানেজিং ডিরেক্টরে ঘরে ঢুকে গেল। যেন চাকরি টা সুরেন পেয়েছে, ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুরেন কে বললেন, সুরেন বাবু এই নিন আপনার এ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার আপনি আজ থেকে এই সংস্থার এক জন কর্মী। একজন কে বললেন, সুরেন বাবু কে ওনার কাজ বুঝিয়ে দিন। সুরেন ব্যাপারটা কিছু বুঝতে পারছে না। চাকরি পেল বিজয় কাজে বহাল হবে সে। সুরেন সেই লোক টি সঙ্গে ঘর থেকে বেড়িয়ে এল, কিন্তু বিজয় কে বাইরে দেখতে পেল না। সুরেন ঐ কর্মী কে জিজ্ঞেস করল আমার বন্ধু কোথায়? তখন ঐ কর্মচারী বলল, আপনি এই যে চাকরি টা পেলেন এটা আপনার বন্ধুর চাকরি। সে কয়েক দিন ধরে এখানে এসে এ ব্যবস্থা করে। সুরেন ফিরে এসে তার মা কে কথা গুলো বলল। আর বিজয় কে খুঁজতে তাদের বাড়িতে গেল, কিন্তু বিজয় ও তার মা কে খুঁজে পাওয়া গেল না। কারণ বিজয়ের বাবা সুরেনের বাবা মারা যাবার ছ মাস আগে মারা গিয়েছেন। মা ছেলে থাকতো এখন বাড়ি ফাঁকা। কথায় কথায় বিজয়ের এই আত্ম ত্যাগ গোটা গ্রামে প্রচার হলো। কিন্তু মা ছেলে কে ঐ গ্রামে আর কোনো দিন দেখা গেল না।
This is a news blog. Here I write story, social incidents, political incidents, & my life history etc.
Tuesday, 2 October 2018
আত্ম ত্যাগ।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment